এম এম লিংকন: সোমবার নির্বাচন কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।  ইসির হাতে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেশন মেরামত বাবদ প্রায় ১২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ না পাওয়ার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলই ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। 

বর্তমানে ২০ হাজারের মত ব্যবহার উপযোগী ইভিএম নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে। তবে এই সব মেশিনের পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। ফলে ২৫ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত দেশের পাঁচটি সিটির ভোট ইভিএমে গ্রহণ করার সক্ষমতা রয়েছে ইসির। এরপর এই সব মেশিন মেরামত না করলে আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করার নিশ্চয়তা থাকবে না। এই জন্য বর্তমান কমিশন ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও টাকার অনিশ্চয়তার কারণে শেষ পর্যন্ত আগেভাগেই এমন সিদ্ধান্ত নিলো কমিশন। 

সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বিরোধিতাও কমিশনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের আগে সময় স্বল্পতা ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পেতে নিশ্চয়তা না পাওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে যে ঐক্যমতের অভাব রয়েছে- সব বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি জানান, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর আগে দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে ইসি সচিব জানান, ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এজন্যে প্রায় ৮০০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবও নেওয়া হয়। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রকল্পটি আর গৃহীত হয়নি।

ইভিএমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ ১ লাখেরও বেশি ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে আগামী অর্থ বছরে পাওয়া যেতে পারে বলে নিশ্চয়তা দেয়। এ অবস্থায় ইভিএমগুলো কিউসি (কোয়ালিট চেকিং) করে কাজ করার মতো অর্থ ইসির হাতে নেই এবং সময় সাপেক্ষ বিষয়। 

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ঈঙ্গিত দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যাবে আর সাত মাস পর। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন।

এরইমধ্যে ইভিএম ব্যবহার, নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুননির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এবং  গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালার কাজ এগিয়ে চলছে।

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানসহ ইসির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

এম এম লিংকন: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটির ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেটের ভোট ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সভায় সোমবার এ সিদ্ধান্ত হয়।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটির মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল, বাছাই ৩০ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। খুলনা ও বরিশাল সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫মে। রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন।

পাঁচ সিটির মধ্যে সবার আগে গাজীপুর সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হয় ১১ মার্চ, ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সিটেতে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। এছাড়া খুলনা সিটিতে ভোট হয় ২০১৮ সালের ১৫ মে। আর রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ভোট হয়।

সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান,  পাঁচ সিটির ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং সিসি ক্যামেরাও থাকবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। ভোটের আপডেট ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা ট্যাবের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবে। সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পযন্ত একটানা ভোট চলবে। সব সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবে। 

স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হয়। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম/ বসুনিয়া